বাংলাদেশের সাম্প্রতিক মাগুরা ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় মাত্র ২১ দিনে শেষ করা হল শুনানি প্রক্রিয়া। আজ (মঙ্গলবার - ১৩ মে, ২০২৫) এই মামলার শুনানি পর্ব শেষ হয়। বিচারক জানিয়েছেন, আগামী ১৭ মে এই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। সরকারি আইনজীবীরা মনে করছেন, এই মামলায় অভিযুক্তদের সংশ্লিষ্ট ধারা মোতাবেক সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে তাঁরা জানিয়েছেন, আগামী দিনে যাতে শিশু নির্যাতনের এমন কোনও ঘটনা আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করবে এই মামলার দৃষ্টান্তমূলক রায়!
উল্লেখ্য, চলতি বছরের মার্চ মাসে দিদির শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে দিদিরই শ্বশুরের লালসার শিকার হতে হয় এক বালিকাকে। গত ৬ মার্চ (২০২৫) গুরুতর আহত ও অসুস্থ অবস্থায় তাকে প্রথমে মাগুরার একটি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয়। পরে আরও ভালো চিকিৎসার জন্য ওই বালিকাকে অন্যত্র স্থানান্তিরত করা হলেও শেষরক্ষা করা যায়নি। গত ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বালিকার মৃত্যু হয়।
সেই মামলাতেই এদিন মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের এজলাসে শুনানি পর্ব শেষ করা হয়। মামলায় রাষ্ট্রের তরফে উপস্থিত ছিলেন সরকারি আইনজীবী মনিরুল ইসলাম। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিট নাগাদ দ্বিতীয় দিনের সওয়াল জবাব শুরু হয়। তাতে অভিযুক্ত এবং সরকার পক্ষ - দুই তরফের আইনজীবীরাই উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত করা হয়েছিল চার অভিযুক্তকেও।
এই ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশ তো বটেই ভারতের সংবাদমাধ্যমেও শুরু থেকেই যথেষ্ট লেখালিখি হয়েছে। মামলার গুরুত্ব বুঝে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অ্যাটর্নি জেনারেলের সমতুল্য আইনজীবী এহসানুল হক সমাজীকে বিশেষ কৌঁসুলি হিসাবে নিয়োগ করে। তিনিও মঙ্গলবারের শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।
তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, 'এই মামলায় আসামির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, মেডিক্যাল এভিডেন্স ও সাক্ষীদের জবানবন্দিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। আমরা আশা করছি, আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। এই ধরনের অপরাধ যাতে আর না ঘটে, এই রায় সেটার একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করবে।'
সরকারি আইনজীবী মনিরুল ইসলাম আরও জানিয়েছেন, এই মামলায় রাষ্ট্র পক্ষের তরফে মোট ২৯ জন সাক্ষী পেশ করা হয়। আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আসামিদের শনাক্ত করেছে ও তাদের বক্তব্যও শুনেছে।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৭ এপ্রিল থেকে এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করা হয় এবং ছুটির দিনগুলি বাদ দিয়ে একটানা শুনানি চলতে থাকে। মামলায় নিহত বালিকার দিদির শ্বশুরকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯/২ ধারায় (ধর্ষণের ফলে মৃত্যু), শিশুটির দিদির স্বামী ও ভাসুরকে দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার দ্বিতীয় অংশ (ভয়ভীতি প্রদর্শন) এবং দিদির শাশুড়ির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় (অপরাধের প্রমাণ নষ্ট) অভিযুক্ত করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, নিহত বালিকার দিদির শ্বশুর স্বীকার করেছে যে গত ৬ মার্চ সকালে ছোট ছেলের ঘরে (বালিকার দিদির স্বামীর ঘরে) মেয়েটিকে একা পেয়ে প্রথমে তার উপর যৌন অত্যাচার চালায় এবং তারপর তাকে খুনের চেষ্টা করে।