পুরীর জগন্নাথ ধামের মতোই এবার হুগলির শ্রীরামপুরে মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরের চূড়াতেও বসানো হবে 'নীলচক্র'! সংবাদমাধ্যমে উঠে আসা তথ্য অনুসারে, পুরীর মন্দিরের সঙ্গে সাজুয্য রেখেই এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এবং ইতিমধ্যেই চক্র তৈরির কাজও শেষ হয়ে গিয়েছে।
জানা গিয়েছে, প্রথা মেনে অষ্টধাতু দিয়েই তৈরি করা হয়েছে মোট চারটি নীলচক্র। সেগুলির নির্মাণকাজ সারা হয়েছে পুরীতেই। এর মধ্যে একটি নীলচক্র মাহেশের মন্দিরের চূড়ায় বসানো হবে। বাকিগুলি নাট মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হবে। ধর্মীয় রীতি মেনে শীঘ্রই কোনও একটি 'শুভ দিনে' নীলচক্রগুলি স্থাপনের প্রক্রিয়া সারা হবে।
মাহেশ জগন্নাথ জিউ ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক পিয়াল অধিকারী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গতকালই (বৃহস্পতিবার - ৮ মে, ২০২৫) বোর্ডের সদস্যরা ওই নীলচক্রগুলি নিয়ে পুরী থেকে মাহেশের উদ্দেশে রওনা হয়ে গিয়েছেন।
পুরীর মূল জগন্নাথ মন্দিরের চূড়ায় যে গোলাকার চক্রটি দেখা যায়, সেটিকেই বলা হয় নীলচক্র। এবং একে ভগবান বিষ্ণুর প্রতীক হিসাবে গণ্য করা হয়। বলা হয়, দিনভর আকাশে সূর্যের অবস্থান বদলের সঙ্গে সঙ্গে নীলচক্রের রংও বদলে যায়! ভোরবেলা, সূর্যোদয়ের সময় এটি দেখে সাদা রঙের মনে হয়। বেলা বাড়লে সূর্যালোক ক্রমে তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। সেই সময়ের মধ্যে - অর্থাৎ - সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে এটি হালকা নীল বর্ণ থেকে ধীরে ধীরে গাঢ় নীল বর্ণের মনে হতে থাকে। আর যখন সূর্যাস্ত হয়, তখন এটিকে দেখে মনে হবে বেগুনি রঙের।
মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরের প্রধান সেবায়েত সৌমেন অধিকারী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাঁরা শুনেছেন বহু বহু বছর আগে মাহেশের মন্দিরেও নীলচক্র ছিল। কিন্তু, পরবর্তীতে সেটি কোথায় উধাও হয়ে যায়, তা জানা নেই। সেই কারণেই পুনরায় মন্দিরের চূড়ায় ও নাটমন্দিরে নীলচক্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যেদিন সেই প্রক্রিয়া সারা হবে, সেদিন হোম, যজ্ঞ, পুজোপাঠও করা হবে।
প্রসঙ্গত, মাহেশের রথযাত্রা শুরু হয় ১৩৯৬ সালে। তারপর থেকে এই প্রথা পালিত হয়ে আসছে। চৈতন্য মহাপ্রভু থেকে শুরু করে শ্রীরামকৃষ্ণ, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর - বহু গুণীজনের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে এই মন্দির ও এখানকার রথযাত্রা উৎসবের সঙ্গে। প্রতিবছর রথযাত্রার দিন পুরীর পর সবথেকে বেশি ভক্তসমাগম হয় এখানেই। তবে, মাহেশের আদি মন্দির ছিল গঙ্গার তীরে। পরে সেটিকে শ্রীরামপুর শহরে স্থানান্তরিত করা হয়।