𝓀 সিনেমায় যাকে বলে জাম্পকাট, তাঁর দেখা মেলে ভাস্কর ও জীবনানন্দের কবিতায়। আপাতভাবে মনে হতে পারে ভাস্কর হয়তো জীবনানন্দের উত্তরসূরী হিসেবেই পেয়েছেন এই ড্যাশ ব্যবহারের কৌশলটি। কিন্তু আরেকটু পিছিয়ে গেলে দেখা যাবে, মাইকেলের মেঘনাদবধেও রয়েছে এই যতির ব্যবহার।
“সম্মুখ সমরে পড়ি বীর চূড়ামণি — বীরবাহু
চলি যবে গেলা যমপুরে — সেই ক্ষণে"
আরও পড়ুন - 🎃‘তোমার মতো যদি কারচুপি করতে পারতাম প্রতুলদা…’ তোমার জন্য আজও গান গাওয়ার সাহস পাই
ไভাস্কর চক্রবর্তী ও জীবনানন্দ দাশ উভয়ই তাদের সমসাময়িক রাজনীতি, নাগরিক ক্লান্তি, যন্ত্র সভ্যতার হাহুতাশের অস্তিত্ববাদী সংকটের মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছেন। জীবনানন্দের লেখায় রয়েছে এক ধরনের বিষাদ, ক্লান্তির মদিরতা। যেন সময় তাঁর কবিতায় অত্যন্ত ধীর গতিতে বহমান। স্বরের ওঠা-নামার তারতম্যও খুব বেশি নয়।
𒅌বাৎসল্য রসের কবি ভাস্করের কবিতা সেখানে এক স্নেহকাঙালের গূঢ় অভিমানের ভাষ্য। পিকাসোর মতো খণ্ড খণ্ড অসংলগ্ন, অজস্র চিত্রবিন্যাস রয়েছে তাঁর কবিতায়।
🃏অন্যদিকে, জীবনানন্দের লেখা বাস্তবতার রাধাকুণ্ড থেকে মাথা উঁচিয়ে ডুব দিয়েছে পরাবাস্তবতার শ্যামকুণ্ডে। দৃশ্যের ভিতর থেকে জন্ম নিয়েছে আরেক দৃশ্য। তাঁর কাব্য ভাষা জন্ম দিয়েছে একপ্রকার মগ্নচৈতন্যের। ‘জীবনদেবতা’র আচ্ছাদন না থাকলেও একে ডিভাইন ম্যাডনেস ছাড়া আর কিই বা বলা যায়!
কবি জহর সেন মজুমদার জীবনানন্দ প্রসঙ্গে একটি আলোচনা সভায় বলেছিলেন, শেষ জীবনে তিনি হয়তো ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁর পরিচিত কবিতা ൩‘আট বছর আগের একদিন’ পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, ডিমেনশিয়ার প্রতিটি ধাপ সেখানে কীভাবে ফুটে উঠেছে।
ꦬজীবনানন্দের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও কবি সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, ‘অন্যমনস্ক জীবনানন্দ এমনিতেই একটু ছিলেন। রাস্তায় বুদ্ধদেব বসু পেছন থেকে ডেকে তাঁর সাড়া পাননি— এমন ঘটনাও আছে। গণেশ অ্যাভিনিউতে পাশাপাশি হেঁটে দেখেছি, একটি কথাও বলছেন না বা হঠাৎ কী মনে হওয়াতে জোরে হেসেই উঠলেন হয়তো।…’
❀আধুনিক সমাজ গবেষক ও মনস্তাত্ত্বিকের একাংশ বলছেন, জীবনানন্দ দাশ হয়তো বাইপোলার ডিজঅর্ডারে ভুগতেন। একটি ঘোরের ভেতর সবসময় বুঁদ হয়ে থাকতেন।
💞‘বাবরের প্রার্থনা’-র কবি তাঁর প্রবন্ধ ‘সময়ের সমগ্রতা’-য় দেখিয়েছেন, সরল প্রগতিতে নয়, বরং পাতাল-পৃথিবী-নীলিমাকে জটিল সমন্বয়ক ছিলেন জীবনানন্দ।
🐎আধুনিক কবিতার প্রতি অভক্তি থেকে রবীন্দ্রনাথও জীবনানন্দ দাশের লেখাকে খাটো চোখে দেখেছিলেন একসময়। সেই সমালোচনাকে অতিক্রম করে সৌভাগ্যক্রমে লেখা চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি, নচেৎ বাংলা কবিতায় রবীন্দ্রপ্রভাবমুক্ত কবিতার যে চোরাস্রোত এনেছিলেন জীবনানন্দ, তা থেকে বঞ্চিত হয়ে যেত আপামর বাঙালি তথা বাংলা ভাষা।
আরও পড়ুন - 𒁃Saraswati Puja 2025: মা সরস্বতীর পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্রে কেন থাকেন ভদ্রকালী? কালী কি বিদ্যার আরেক রূপ
🔴তাঁর বহুপঠিত ‘রাত্রি’ কবিতাটিতে যেন দিনের প্রতিস্পর্ধী হয়ে ওঠে কলকাতার রাত্রি। ভোগবাদের যমুনায় কঙ্কালসার হয়ে যাওয়া কলকাতা শহরের ছবি দেখা যায়। সামন্ততন্ত্র ও পুঁজিবাদের অসহযোগ সহাবস্থানে থেতলে যাওয়া জনজীবনের এক নির্মম প্রতিকৃতি ভেসে ওঠে কবিতার শরীরে — কুষ্ঠরোগী কিংবা ইহুদি রমণী হয়ে।
𓄧ভারতীয় নন্দনতত্ত্বের বিচারে,জীবনানন্দকে হয়তো অদ্ভুত রসের কবি বলা যায়।